Thank you for your Cooperation

প্রযুক্তির সংবাদ

নতুন বছরেই ফোরজি -

তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। থ্রিজি প্রযুক্তি চালু, ইউনিয়ন পরিষদ তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তিসেবার আওতায় নিয়ে আসা; পাশাপাশি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালুর মাধ্যমে শিক্ষাদান পদ্ধতিতেও এসেছে বড় পরিবর্তন। লার্নিং-আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ পেশাজীবী ও উদ্যোক্তা তৈরির প্রকল্প ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইন্টাররেট ব্যবহার দ্রুত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে দেশের সবক'টি মন্ত্রণালয়সহ অধিকাংশ সরকারি দপ্তরের নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। ৬৪ জেলা প্রশাসন তৈরি করেছে জেলা তথ্য বাতায়ন। ফলে সরকারি কর্মকাণ্ড-সংক্রান্ত অনেক তথ্য এখন এসব ওয়েবসাইট ও তথ্য বাতায়ন থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। পাবলিক পরীক্ষায় ভর্তির আবেদন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন ফরম, পাসপোর্ট আবেদনের ফরম_ সবকিছুই এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ডিজিটাল ডাটাবেস তৈরির কাজ। এটি সম্পন্ন হলে দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। থ্রিজির সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) প্রযুক্তি ব্যবহারের পথে। এ বছর থেকেই শুরু হবে ফোরজির যাত্রা।
বিপুল অগ্রগতির মধ্যে কিছু বড় প্রকল্প এখনও জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্নের প্রকল্প 'কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক' এবং কারওয়ান বাজারে সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ প্রকল্প এখনও বাস্তবায়ন পর্যায়ে যায়নি। তবে বিদায়ী বছরে এ দুটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আগের জটিলতা অনেকখানি দূর হয়েছে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরির লার্নিং-আর্নিং প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতির কিছু অভিযোগ উঠেছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সমকালকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সফলতার এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে উন্নত প্রযুক্তির দেশে পরিণত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সে পথেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। যে কোনো ক্ষেত্রে অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
২০০৮ সাল থেকে থ্রিজি প্রযুক্তি চালুর উদ্যোগ শুরু হয়। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতা, জটিলতায় তা আটকে থাকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত। অবশেষে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুত মহাজোট সরকারের শেষ বছরে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে থ্রিজি প্রযুক্তির জন্য স্পেকট্রাম বরাদ্দের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশের পাঁচটি মোবাইল ফোন অপারেটর সফলভাবে দেশজুড়ে থ্রিজি সেবা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। অবশ্য এপ্রিল মাসে সবার আগে দেশের ৬৪ জেলায় থ্রিজি সেবা পেঁৗছে দিতে সক্ষম হয় শীর্ষস্থানীয় অপারেটর গ্রামীণফোন। থ্রিজি সেবা চালুর পর মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যাও দ্রুত বেড়েছে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, চার কোটি ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৩৪ জন মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছেন। চলতি বছরের আগস্টের তথ্য অনুযায়ী, সে সময় দেশে থ্রিজি ইন্টারনেট প্যাকেজের গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৪৮ লাখ ৪৫ হাজার। বছর শেষে গ্রাহকসংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এ বছর মোট মোবাইল ফোন (ভয়েস কল ও ইন্টারনেট) গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়ায় ১১ কোটি ৯৬ লাখ ২৩ হাজার, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশই এখন মোবাইল ফোনের গ্রাহক।
২০১৫ সালেই চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) এলটিই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ৭০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম উন্মুক্ত করার কথা রয়েছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোন গ্রাহকদের জন্য কোয়ালিটি অব সার্ভিস, মোবাইল নাম্বার পোর্টাবিলিটি চালু এবং ট্রান্সমিশন সেবা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত করের বোঝা সরিয়ে নেওয়া হলে ২০১৫ সাল শেষে বাংলাদেশও চিহ্নিত হতে পারে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের আদর্শ দেশ হিসেবে।
তথ্যসেবা কেন্দ্র ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম :২০১০ সালের ১১ নভেম্বর থেকে যাত্রা শুরু হয় ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল উদ্যোগ ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্র। সারাদেশে চার হাজার ৫৪৭টি তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তিসেবা পেঁৗছে দেওয়া হয়। গত চার বছরে ৬০ ধরনের ১১ কোটি সেবা দেওয়া হয় তৃণমূলে। এসব তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে জমির মাঠ পরচা, সরকারি বিভিন্ন লাইসেন্সের আবেদন, কৃষি তথ্য, অনলাইন জন্মনিবন্ধন, ভর্তি ফরম পাওয়া, বিদেশে স্বজনের সঙ্গে ভিডিওকল করার সুবিধাসহ তথ্যপ্রযুক্তির বিপুল সুবিধা পাচ্ছেন নিরক্ষর মানুষ। সেবা পাওয়ার জন্য এখন মানুষকে জেলা শহরে ছুটতে হচ্ছে না, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সেবাই মানুষের দোরগোড়ায় চলে যাচ্ছে। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর ব্লগে সাধারণ মানুষ লিখছেন তাদের নানা সমস্যার কথা। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে সরকারি কাজে অনিয়ম, বাল্যবিয়ের মতো সামাজিক অপরাধ বন্ধেও এসব তথ্যকেন্দ্র কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এর মধ্য দিয়ে গত ছয় বছরে নিভৃতে অনেকটাই বদলে গেছে বাংলাদেশ।
ইউআইসি প্রতিষ্ঠার চতুর্থ বার্ষিকীতে ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। প্রায় ১০ হাজার উদ্যোক্তা সম্মেলনে অংশ নিয়ে তাদের পাওয়া-না পাওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে। এসব ইউনিয়ন পরিষদ তথ্যকেন্দ্রের অধিকাংশ চলছে মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে। গত বছর থেকে এসব কেন্দ্রে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পেঁৗছে দেওয়ার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প সফল হলে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের বড় অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হবে।
এর পাশাপাশি দেশের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি উদ্যোগে চালু হয়েছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে। চালু হয়েছে অনলাইন শিক্ষাদান পদ্ধতিও। শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক করতে এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
হাইটেক পার্ক :কালিয়াকৈরে দেশের সবচেয়ে বড় হাইটেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৯৮ সালে। তবে এখন পর্যন্ত সে উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি। বিভিন্ন সরকারের আমলে এ প্রকল্পে কাজ পাওয়া নিয়ে সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লড়াইয়ে বার বার এ প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যায়। সর্বশেষ ২০১৪ সালে আগের সব টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর মধ্য দিয়ে জটিলতা নিরসন করে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। যদিও প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা রয়েই গেছে, তার পরও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাসরি এ প্রকল্প তত্ত্বাবধান করায় ২০১৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি প্রতি জেলায় হাইটেক পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্তও ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য বড় উদ্যোগ। কারওয়ানবাজারে সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ শেষ হলে দেশে সফটওয়্যার নির্মাণ ও তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরিতে বড় ধরনের অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হবে।
লার্নিং-আর্নিং প্রকল্প :তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরও একটি বড় প্রকল্প 'লার্নিং-আর্নিং প্রকল্প'। ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে ৫৫ হাজার তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরির লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে পাইলট প্রকল্পগুলো সাফল্য পেয়েছে। তবে বছরের শেষ পর্যায়ে প্রকল্পে ৩০টি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় এবং ধানমণ্ডিতে অবস্থিত একটি বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তিসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানপ্রতি বরাদ্দের ২০ শতাংশ বিনিময়ের মাধ্যমে ৩০টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরির অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কঠোর তদারকির মাধ্যমে এ অনিয়ম রোধ করা গেলে লার্নিং-আর্নিং প্রকল্প হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে বড় মাইলফলক। ২০১৫ সালেই এ মাইলফলক ছুঁয়ে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীরা বিশ্ববাজারে চমক দেখাতে পারেন। ২০২১ সালের মধ্যে প্রযুক্তির বাজারে পাঁচ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও অসম্ভব হবে না।
Sours: BTRC     

No comments: